কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন করে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা, মে ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে সেনানিবাস এলাকায় পাঁচশ’ শয্যার একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সাধারণ মানুষও চিকিৎসা সেবা পাবে।
রোববার সকালে ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন করে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাসপাতাল একটি ভৌত অবকাঠামো। এটিকে কার্যকর করার দায়িত্ব এখানকার চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মীদের। একটি হাসপাতাল মানুষের কোনো কাজেই আসবে না, যদি না আপনারা সঠিকভাবে সেবা প্রদান করেন।”
ঢাকা সেনাবিনাস এলাকায় বসবাসরত বেসামরিক জনগণের জন্য এর আগে সকালে একশ’ শয্যার ‘সিরাজ-খালেদা মেমোরিয়াল ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতাল’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতার প্রথম সেবামূলক প্রকল্প। ঢাকা সেনানিবাস রেল স্টেশনের বিপরীতে ছয় একর জায়গার ওপর পাঁচশ’ শয্যার এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
হাসপাতালটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বড় কোনো সরকারি হাসপাতাল ছিল না। অসুস্থ হলে এ এলাকার জনগণকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যেতে হত।”
“আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকেও আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যসেবার মত মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে পূরণ করতে”, যোগ করেন তিনি।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেদিন থেকেই এই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়ে আসছিল।”
এই হাসপাতালের পাশাপাশি একটি নার্সেস ট্রেনিং ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালকে উন্নত করা। আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখন আর রোগীদের ঢাকায় আসতে হবে না। সবাই নিজ নিজ এলাকাতেই চিকিৎসা পাবে।”
স্বাস্থ্য খাতের বাজেট দ্বিগুণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০৬টি স্বাস্থ্য কমপেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। আরো, ৯৭টিতে শয্যা বাড়ানোর কাজ চলছে।”
তিনি জানান, ১৮টি জেলা হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা জানাবেন এটা সেনানিবাস এলাকায় হলেও এটা জনগণের হাসপাতাল।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন, স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবির ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল আব্দুল করিম খান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুর রহমান ফকির এবং নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।